গর্ভাবস্থায় সহবাস করার নিয়ম

 গর্ভাবস্থায় সহবাস করা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিরাপদ, তবে এটি নির্ভর করে গর্ভাবস্থার বিভিন্ন ধাপ এবং মায়ের শারীরিক অবস্থার উপর। গর্ভাবস্থায় সহবাসের সময় কিছু বিশেষ নিয়ম ও পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত যাতে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের ঝুঁকি না থাকে। এখানে গর্ভাবস্থায় সহবাসের কিছু নিয়ম ও পরামর্শ দেওয়া হলো:

১. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:

  • গর্ভাবস্থার প্রথম থেকেই আপনার ডাক্তারকে সহবাসের বিষয়ে আলোচনা করুন। কিছু ক্ষেত্রে, যেমন প্ল্যাসেন্টা প্রেভিয়া, গর্ভপাতের ইতিহাস, বা অন্যান্য জটিলতা থাকলে ডাক্তার সহবাস থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিতে পারেন।

২. সহবাসের সময় পজিশন:

  • স্বস্তিদায়ক পজিশন: গর্ভাবস্থার সময়, বিশেষ করে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে, এমন পজিশন বেছে নিন যা মায়ের জন্য আরামদায়ক। মিশনারি পজিশন (মা নিচে এবং সঙ্গী উপরে) প্রায়শই অস্বস্তিকর হতে পারে, তাই পাশ দিয়ে শুয়ে থাকা বা সঙ্গীকে পিছন থেকে সহবাস করার পজিশন বেছে নিতে পারেন।
  • কোনো চাপ না দেওয়া: পেটের ওপর কোনো চাপ না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। পেটের ওপর চাপ দিলে মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৩. জমাট বা কঠোর সহবাস এড়িয়ে চলা:

  • গর্ভাবস্থার সময় কোমল এবং মন্থর গতিতে সহবাস করা উচিত। সহবাসের সময় অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা এবং গভীর পেনিট্রেশন এড়িয়ে চলা ভালো।

৪. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা:

  • গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। সহবাসের আগে এবং পরে উভয়েরই পরিষ্কার থাকা উচিত।

5. সঠিক লুব্রিকেন্ট ব্যবহার:

  • গর্ভাবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে যোনিতে শুষ্কতা অনুভূত হতে পারে। এতে সহবাসের সময় অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে। লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে, তবে সবসময় ওয়াটার-বেজড লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা উচিত, কারণ কিছু লুব্রিকেন্ট মায়ের ত্বকে বা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৬. অস্বস্তি বা ব্যথা হলে বন্ধ করুন:

  • সহবাসের সময় যদি কোনো ধরনের অস্বস্তি, ব্যথা, রক্তপাত বা অন্যান্য অসুস্থতা অনুভব করেন, তবে অবিলম্বে সহবাস বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৭. মানসিক চাপ কমানো:

  • গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা এবং একে অপরের প্রতি যত্নশীল আচরণ মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

৮. মধ্যবর্তী সময়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ সময়:

  • গর্ভাবস্থায় মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে সহবাসের সময়সূচি ঠিক করুন। প্রয়োজনে দীর্ঘ বিরতি নিন যাতে মা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান।

৯. সুরক্ষিত থাকুন:

  • সহবাসের সময় সুরক্ষা ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করুন। যদিও গর্ভাবস্থায় গর্ভনিরোধক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, তবে যদি কোনো যৌনসংক্রমিত রোগ (এসটিডি) নিয়ে উদ্বেগ থাকে, তবে কনডম ব্যবহার করা যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় সহবাস সাধারণত নিরাপদ হলেও, প্রতিটি গর্ভাবস্থা আলাদা এবং কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন হতে পারে। তাই, সহবাসের আগে নিজের শরীর এবং সন্তানের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url