লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম
লম্বা হওয়ার জন্য জেনেটিক্স একটি বড় ভূমিকা পালন করে, তবে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং ব্যায়াম আপনার সর্বোচ্চ সম্ভাব্য উচ্চতা অর্জনে সহায়ক হতে পারে, বিশেষত বয়ঃসন্ধিকালে। এখানে কিছু উপায় এবং ব্যায়াম দেওয়া হলো যা উচ্চতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে:
১. সুষম খাদ্যাভ্যাস:
- প্রোটিন: প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, এবং বাদাম হাড় ও পেশির গঠন এবং বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি: দুধ, পনির, দই, এবং সবুজ শাকসবজি ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সরবরাহ করে, যা হাড়ের গঠন এবং মজবুতিতে সহায়ক।
- ভিটামিন এবং মিনারেল: ফল এবং সবজি থেকে প্রচুর ভিটামিন, বিশেষ করে ভিটামিন এ, সি, এবং ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
২. যথেষ্ট ঘুম:
- পর্যাপ্ত ঘুম উচ্চতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বয়ঃসন্ধিকালে, বিশেষ করে রাতে গভীর ঘুমের সময় শরীর থেকে গ্রোথ হরমোন নির্গত হয়। প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
৩. সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা:
- ভালো ভঙ্গি উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক। খাড়া হয়ে বসা এবং হাঁটা অভ্যাস করুন। খারাপ ভঙ্গি আপনার মেরুদণ্ডের প্রাকৃতিক গঠনকে প্রভাবিত করতে পারে এবং আপনার উচ্চতা কম মনে হতে পারে।
৪. ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যক্রম:
ব্যায়াম উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে:
১. হ্যাংগিং (Hanging):
- কোনো বার বা রড ধরে ঝুলে থাকুন। এটি মেরুদণ্ডকে সোজা করে এবং উচ্চতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
- প্রতিদিন ১০-২০ সেকেন্ড করে কয়েকবার করুন।
২. কবরা স্ট্রেচ (Cobra Stretch):
- মেঝেতে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকুন এবং হাতের সাহায্যে শরীরের উপরের অংশটি উত্থাপন করুন।
- এটি মেরুদণ্ডকে প্রসারিত করে এবং উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৩. পেলভিক টিল্ট (Pelvic Tilt):
- মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে থাকুন, হাঁটু ভাঁজ করে পা মাটিতে রাখুন। এরপর পায়ের সাহায্যে কোমর উঁচু করে তুলুন।
- এটি মেরুদণ্ডের নিচের অংশকে প্রসারিত করে।
৪. তাড়না দেওয়া (Jumping or Skipping):
- স্কিপিং বা লাফানোর ব্যায়াম উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি শরীরের পেশি এবং হাড়কে শক্তিশালী করে।
৫. সাইড স্ট্রেচ (Side Stretch):
- দাঁড়িয়ে এক হাতে মাথার উপর তুলে অন্য হাতে সেই দিকের দিকে টানুন। এটি পিঠের পেশিগুলোকে প্রসারিত করে।
৬. তাড়না পোজ (Tadasana):
- সোজা হয়ে দাঁড়ান, হাত উপরে তুলে আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে শরীরকে টানুন। এটি পুরো শরীরের পেশি প্রসারিত করে।
৫. যোগব্যায়াম:
- যোগব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে প্রসারিত করা যায়। "সারভঙ্গাসন", "ভুজঙ্গাসন" এবং "তড়াসন" উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
৬. প্রচুর পানি পান:
- পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং কোষের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক, যা উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
৭. স্ট্রেস কমানো:
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। নিয়মিত মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করলে স্ট্রেস কমে এবং শরীরের বৃদ্ধির হার ঠিক থাকে।
৮. চিকিৎসকের পরামর্শ:
- যদি আপনি উচ্চতা বৃদ্ধিতে সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হরমোনাল বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে উচ্চতা কম হতে পারে।
এই অভ্যাস এবং ব্যায়ামগুলো নিয়মিত চর্চা করলে সর্বোচ্চ উচ্চতা অর্জনে সহায়ক হতে পারে। তবে, জেনেটিক ফ্যাক্টর এবং অন্যান্য শারীরিক বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।